যাদের উপর ছিয়াম ফরয নয়

যাদের উপর সিয়াম ফরয নয়

(১) শিশু
নাবালক ছোট শিশুর জন্য ছিয়াম ফরয নয়। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তির নিকট থেকে (পাপ লিখার) কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; জ্ঞানশূন্য পাগলের নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সুস্থ হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তির নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়েছে। আর শিশুর নিকট থেকে; যতক্ষণ না সে সাবালক হয়েছে।’’(আহমাদ, মুসনাদ, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম, মুস্তাদ্রাক, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৫১২-৩৫১৪নং)

অবশ্য জ্ঞানবান শিশু ছিয়াম রাখলে শুদ্ধ হবে এবং সওয়াবও পাবে। আর তার পিতা-মাতার জন্যও রয়েছে তরবিয়ত ও ভালো কাজের নির্দেশ দেওয়ার সওয়াব।

(২) পাগল
পাগলের উপর ছিয়াম ফরয নয়। কারণ, তার উপর থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে; যেমন পূর্বোক্ত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে।

(৩) অক্ষম ব্যক্তি
বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি, যার শারীরিক ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে গেছে এবং দিনের দিন আরো খারাপের দিকে যেতে যেতে মরণের দিকে অগ্রসর হতে চলেছে, সে ব্যক্তির জন্য ছিয়াম ফরয নয়। কষ্ট হলে সে ছিয়াম রাখবে না। মহান আল্লাহ বলেন,

{وَعَلَى الَّذِيْنَ يُطِيْقُوْنَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِيْنٍ}

অর্থাৎ, যারা ছিয়াম রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ছিয়াম রাখতে চায় না, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)

ইবনে আববাস (রাঃ) বলতেন, এই আয়াত মনসূখ নয়। তারা হল বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যারা ছিয়াম রাখতে সক্ষম নয়। তারা প্রত্যেক দিনের বদলে একটি করে মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। [বুখারী ৪৫০৫নং]

খাদ্য দান কখন করবে -সে ব্যাপারে এখতিয়ার আছে। যদি প্রত্যেক দিন একটা করে ছিয়ামের ফিদইয়া দান করে, তাও চলবে। যদি মাসের শেষে সব দিনগুলি হিসাব করে একই দিনে তা দান করে, তাও চলবে। এ ব্যাপারে বাধ্য-বাধকতা কিছু নেই।ফিদইয়া একজন কে দেয়া যেতে পারে আবার একাধিক মিসকিন দের কেও দেয়া যেতে পারে তবে ছিয়ামের আগেই দেওয়া চলবে না। কারণ, তা আগে ছিয়াম রাখার মত হয়ে যাবে।

৪) অসুস্থ ব্যাক্তিঃ
অসুস্থতা ২ ধরনের হতে পারে।

১. যে ব্যক্তির রোগ সাময়িক, যা সেরে যাওয়ার আশা আছে; যেমন জ্বর ইত্যাদি, এমন ব্যক্তির ২ অবস্থা হতে পারেঃ

(ক) ছিয়াম রাখলে তার কষ্ট হবে না বা ছিয়াম তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য ছিয়াম রাখা ওয়াজেব। কারণ, তার কোন ওজর নেই।

(খ) ছিয়াম রাখলে তার কষ্ট হবে, কিন্তু ছিয়াম তার কোন ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় তার জন্য ছিয়াম রাখা মকরূহ। কারণ, তাতে আল্লাহর দেওয়া অনুমতি ও তার আত্মার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে ভিন্ন আচরণ হয়ে যায়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন,

{فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر}

অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)

২. যে ব্যক্তির এমন অসুস্থ যে ছিয়াম রাখলে তার যে ব্যক্তির অসুস্থতা বেড়ে যাবে, অথবা অন্য কোনো বড় রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকবে অথবা তার অবস্থা মরণাপন্ন হয়ে যাবে।) এমতাবস্থায় তার জন্য ছিয়াম রাখা ফরয নয় কেননা, নিজের উপর ক্ষতি ডেকে আনা বৈধ নয়। মহান আল্লাহ বলেন,

{وَلاَ تَقْتُلُوْا أَنْفُسَكُمْ، إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً}

অর্থাৎ, তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)

তিনি আরো বলেন,

{وَلاَ تُلْقُوْا بِأَيْدِيْكُمْ إِلَى التَّهْلُكَة}

অর্থাৎ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)

(৫) মুসাফিরঃ
মুসাফিরের জন্য ছিয়াম কাযা করা বৈধ; চাহে সে মুসাফির ছিয়াম রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, ছিয়াম তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক, অর্থাৎ মুসাফির যদি ছায়া ও পানির সকল সুবিধা নিয়ে সফর করে এবং তার সাথে তার খাদেমও থাকে অথবা না থাকে, (সফর এরোপ্লেনে হোক অথবা পায়ে হেঁটে); যেমনই হোক তার জন্য ছিয়াম কাযা করা ও নামায কসর করা বৈধ।মহান আল্লাহ বলেন,

{فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيْضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَر}

অর্থাৎ, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অপর কোন দিন গণনা করবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৪)

(৬) গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মহিলাঃ
গর্ভবতী অথবা দুগ্ধদাত্রী মহিলা ছিয়াম রাখার দরুন যদি নিজেদের কষ্ট হয় অথবা তাদের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে উভয়ের জন্য ছিয়াম না রেখে যখন সহজ হবে অথবা ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে তখন ছিয়াম কাযা করে নেওয়া বৈধ।যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘আল্লাহ মুসাফিরের উপর থেকে (যথাসময়ে) ছিয়াম এবং অর্ধেক নামায, আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মহিলার উপর থেকে (যথাসময়ে) ছিয়াম লাঘব করেছেন।’’
(আহমাদ, মুসনাদ ৪/৩৪৭, আবূ দাঊদ ২৪০৮, তিরমিযী ৭১৫, নাসাঈ ২২৭৬, ইবনে মাজাহ ১৬৬৭, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ১৮৩৫নং)

আর মহান আল্লাহ বলেন,

{وَلا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ}

‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না।’’ (কুরআনুল কারীম ২/১৯৫)

{وَلا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيماً}

‘‘তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল।’’ (কুরআনুল কারীম ৪/২৯)