যিল হাজ্জ্ব মাসের ১ম ১০ দিনের আমল সমূহ

১.চুল, নখ ও চর্মাদি না কাটাঃ

যারা কুরবানী দেওয়ার নিয়ত করেছেন তাদের জন্য ওয়াজিব হল যিল হাজ্জ্ব মাসের  ১ তারিখ থেকে কুরাবানীর পশু যবেহ না করা পর্যন্ত  দেহের কোন লোম বা চুল, নখ ও চর্মাদি না কাটা। এ বিষয়ে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘‘যখন তোমরা যিল হাজ্জ্ব মাসের চাঁদ দেখবে এবং তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন কুরবানী না করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ (কাটা) হতে বিরত থাকে।’’ অন্য এক বর্ণনায় বলেন, ‘‘সে যেন তার (মরা বা ফাটা) চর্মাদির কিছুও স্পর্শ না করে।’’[মুসলিম]

মুহাদ্দিসগণের মত অনুযায়ী এ নির্দেশ ওয়াজিবের অর্থে এবং নিষেধ হারামের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু যদি কেউ জেনে-শুনে ইচ্ছা করেই চুল-নখ কাটে, তবে তার জন্য জরুরী যে, সে যেন আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে। আর তার জন্য কোন কাফফারা  নেই। সে স্বাবাভাবিকভাবে কুরবানীই করবে।

২. তাওবাঃ

তাওবা অর্থ ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তন করা। আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানি থেকে ফিরে আসা, আল্লাহর হুকুমের সঠিক ভাবে পালন করার উপর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা এবং অতীতের কৃত কর্মের উপর অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানি না করা ও তার হুকুমের অবাধ্য না হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। এ দিন গুলোতে তাওবা করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَيِّ‍َٔاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ يَوۡمَ لَا يُخۡزِي ٱللَّهُ ٱلنَّبِيَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥۖ نُورُهُمۡ يَسۡعَىٰ بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَبِأَيۡمَٰنِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتۡمِمۡ لَنَا نُورَنَا وَٱغۡفِرۡ لَنَآۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ – ٨

অর্থঃ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর—বিশুদ্ধ তওবা; সম্ভবত তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দ কাজগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ লজ্জা দেবেন না নবীকে এবং তার মোমিন সঙ্গীদেরকে, তাদের জ্যোতি তাদের সম্মুখে ও ডান পার্শ্বে ধাবিত হবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জ্যোতিকে পূর্ণতা দান কর এবং আমাদেরকে ক্ষমা কর, নিশ্চই তুমি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’
[সূরা তাহরীম, আয়াত: ৮]

৩. ফরয ও নফল সালাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করাঃ

অর্থাৎ ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা, যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। ফরয সালাতগুলো সময় মত সম্পাদন করা, বেশি বেশি করে নফল সালাত আদায় করা। যেহেতু এগুলোই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার সর্বোত্তম মাধ্যম। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: তুমি বেশি বেশি সেজদা কর, কারণ তুমি এমন যে কোনো সেজদাই কর না কেন তার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ ক্ষমা করবেন। [মুসলিম] এটা সব সময়রে জন্য প্রযোজ্য। নিয়মিত ফরয ও ওয়াজিবসমূহ আদায়ে যত্নবান হওয়া- অর্থাৎ, ফরয ও ওয়াজিবসমূহ সময়-মত সুন্দর ও পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। যেভাবে আদায় করেছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সকল ইবাদতসমূহ তার সুন্নত, মোস্তাহাব ও আদব সহকারে আদায় করা। হাদিসে এসেছে—

عن أبي هريرة- رضى الله عنه- قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الله تعالى قال: «من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب- وما تقرب إلي عبدي بشيء أحب إلي مما افترضته عليه- وما يزال عبدي يتقرب إلي بالنوافل حتى أحبه- فإذا أحببته كنت سمعه الذي يسمع به- وبصره الذي يبصر به- ويده التي يبطش بها- ورجله التي يمشي بها- وإن سألني لأعطينه- ولئن استعاذ بي لأعيذنه – وما ترددت عن شيء أنا فاعله ترددي عن نفس المؤمن – يكره الموت وأنا أكره مساءته». رواه البخاري

অর্থঃ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই, আমি তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে তাতে কোনো রকম দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ হরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার প্রতি কষ্টদায়ক বস্তু দিতে অপছন্দ করি।’
[বুখারি, হাদিস: ৬৫০২]

৪. ছিয়াম পালনঃ

যিলহাজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের ছওম রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেহেতু অন্যান্য নেক আমলরে মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নসহকারে সিয়াম পালন করা।

عن حفصة- رضى الله عنها- قالت: أربع لم يكن يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم-: صيام عاشوراء- والعشر- وثلاثة أيام من كل شهر والركعتين قبل الغداة . رواه أحمد- والنسائي صحيح سنن أبي داود- صحيح سنن النسائي

হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল: আশুরার সওম, যিল হজ্জ্বের দশ দিনের সওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সওম, ও জোহরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।
[আহমদ: ৬/২৮৭, আবু দাউদ: ২১০৬, নাসায়ী: ২২৩৬]

৫. হাজ্জ্ব ও ওমরাহ্‌ করাঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদতের জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। এ দুটি ইবাদতে রয়েছে পাপের কুফল থেকে আত্মার পবিত্রতা, যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:—

«من حج فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته أمه »

অর্থঃ ‘যে ব্যক্তি হাজ্জ্ব করেছে, তাতে কোনো অশ্লীল আচরণ করেনি ও কোনো পাপে লিপ্ত হয়নি সে সে দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে গেল, যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করেছে।’ [বুখারি: ১৪৪৯, মুসলিম: ১৩৫০]

হাদিসে আরও এসেছে—
عن أبي هريرة- رضى الله عنه- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما- والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجـنة » رواه البخاري – ومسلم

অর্থঃ আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘এক ওমরাহ্‌ থেকে অন্য ওমরাহ্‌কে তার মধ্যবর্তী পাপসমূহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আর কবূল হাজ্জ্ব এর পুরস্কার হল জান্নাত।’

[বুখারি: ১৬৮৩, মুসলিম: ১৩৪৯]

৬. আল্লাহর যিকির করাঃ

এ দিনসমূহে অন্যান্য আমলের মাঝে যিকিরের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে, যেমন হাদিসে এসেছে:—

عن عبد الله بن عمر- رضى الله عنهما- عن النبى- صلى الله عليه وسلم- قال: «ما من أيام أعظم عند الله ولا أحب إليه من العمل فيهن من هذه العشر- فأكثروا فيهن من التهليل والتكبير والتحميد ».]رواه أحمد- وقال أحمد شاكر:إسناده صحيح [

অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এ দশ দিনে [নেক] আমল করার চেয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অধিক প্রিয় ও মহান আর কোনো আমল নেই। তোমরা এ সময়ে তাহলীল [লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ] তাকবীর [আল্লাহু আকবার] তাহমীদ [আল-হামদুলিল্লাহ] বেশি করে আদায় কর। [আহমদ, হাদিস: ১৩২]

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:—

لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ – الحج : ٢٨

অর্থঃ ‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’

[ সূরা আল-হাজ্জ্ব, আয়াত: ২৮]

অধিকাংশ আলেম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা করেন, তার পবিত্রতা বর্ণনা করেন, তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।

হাদিসে আছে চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। ১-সুবহানাল্লাহ, ২-আলহামদু লিল্লাহ, ৩-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ৪-আল্লাহু আকবর। এ দিনগুলোতে এ যিকিরগুলো করা যেতে পারে।

৭. তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদঃ

এ দিনগুলোতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের মহত্ত্ব ঘোষণার উদ্দেশ্যে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। এ তাকবীর প্রকাশ্যে ও উচ্চস্বরে মসজিদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, বাজার সহ সর্বত্র উচ্চ আওয়াজে পাঠ করা হবে।  তাকবীর হল:—

اَللهُ أَكْبَرُ- اَللهُ أَكْبَرُ- لَااِلٰهِ إِلَّا اللهُ- وَاللهُ أَكْبَرُ- اللهُ أَكْبَرُ وَلِلّٰهِ الحَمْدُ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।’
অর্থ : ‘আল্লাহ  সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহ  সর্বশ্রেষ্ঠ,  আল্লাহ ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই; আল্লাহ  সর্বশ্রেষ্ঠ,আল্লাহ  সর্বশ্রেষ্ঠ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।’

তাকবীর পড়ার নিয়মঃ জিলহজের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পড়া ।

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী সবার জন্য একাকি কিংবা জামাআতে নামাজ ফরজ নামাজ আদায় করার পর একবার তাকবিরে তাশরিক আদায় করা আবশ্যক তবে মেয়েরা নিম্ন-স্বরে তাকবীর পাঠ করবে।

সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. ও আবু হুরাইরা রা. যিলহজ মাসের প্রথম দশকে বাজারে যেতেন ও তাকবীর পাঠ করতেন, লোকজনও তাদের অনুসরণ করে তাকবীর পাঠ করতেন। অর্থাৎ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই দুই প্রিয় সাহাবি লোকজনকে তাকবীর পাঠের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন। [বুখারি, ঈদ অধ্যায়]

ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ইবনে ওমর ও আবূহুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ দশ দিন তাকবীর বলতে বলতে বাজারের জন্য বের হতেন, মানুষরাও তাদরে দেখে দেখে তাকবীর বলত। তিনি আরও বলেছেন, ইবনে ওমর মিনায় তার তাবুতে তাকবীর বলতেন, মসজিদের লোকেরা শুনত, অতঃপর তারা তাকবীর বলত এবং বাজারের লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীর বলত। এক পর্যায়ে পুরো মিনা তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠত।

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ দিনগুলোতে মিনায় তাকবীর বলতেন, প্রত্যেক সালাতের পর, বিছানায়, তাঁবুতে মজলিসে ও চলার পথে সশব্দে তাকবীর বলা মোস্তাহাব। যেহেতু ওমর, ইবনে ওমর ও আবূহুরায়রা সশব্দে তাকবীর বলেছেন।

৮. আরাফার দিন ছওম রাখাঃ

হাজ্জ্ব পালনকারী ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফার দিন ছওম রাখা। আবু কাতাদাহ রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনের ছওম রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

«احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده » ….رواه مسلم

আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, ইহা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছররে গুনাহর কাফফারা হবে। [মুসলিম: ১১৬৩]

৯. কুরবানির দিন তথা দশ তারিখের আমলঃ

কুরবানির দিনের ফযিলত

[১] এ দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু যবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছে:—

عن ابن عمر- رضى الله عنهما- أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال يوم النحر: [أي يوم هذا] ؟ قالوا: يوم النحر- قال: «هذا يوم الحج الأكبر».رواه أبو داود وصححه الألباني

ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোনো দিন? সাহাবিগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কুরবানির দিন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটা হল ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হাজ্জ্ব দিন। [আবু দাউদ: ১৯৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।]

[২] কুরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। হাদিসে এসেছে—

عن عبد الله بن قرط عن النبي- صلى الله عليه وسلم- قال: «إن أعظم الأيام عند الله تبارك وتعالى: يوم النحر ثم يوم القر.» رواه أبو داود

অর্থঃ আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন। [আবু দাউদ: ১৭৬৫]

এ দিনগুলোর ব্যাপারে অনেক মুসলিমই গাফেল, অথচ অনেক আলেমের মতে নিঃর্শতভাবে এ দিনগুলো উত্তম, এমনকি আরাফার দিন থেকেও। ইবনুল কাইয়্যেম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম দিন, নাহরের দিন। আর তাই হল হজ্জ্বে আকবারের দিন। যেমন সুনানে আবূ দাউদে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় দিন হল নহরের দিন, অতঃপর মিনায় অবস্থানের দিন। অর্থাৎ এগারতম দিন। কেউ কেউ বলেছেন: আরাফার দিন তার থেকে উত্তম। কারণ, সে দিনের সিয়াম দুই বছরের গুনাহের কাফফারা। আল্লাহ আরাফার দিন যে পরিমাণ লোক জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন, তা অন্য কোনো দিন করেন না। আরও এ জন্যও যে, আল্লাহ তা‘আলা সে দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন। তবে প্রথম বক্তব্যই সঠিক: কারণ, হাদিস তারই প্রমাণ বহন করে, এর বিরোধী কিছু নেই। যাই হোক, উত্তম হয় আরাফার দিন নতুবা মিনার দিন, হাজী বা বাড়িতে অবস্থানকারী সবার উচিৎ সে দিনের ফযিলত অর্জন করা এবং তার মুহুর্তগুলো থেকে উপকৃত হওয়া।

১০. কুরবানি করাঃ

কুরবানি কাকে বলে?

কুরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের লক্ষে যবেহ করা।

ইসলামি শরিয়তে এটি ইবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত্য দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে:—

-فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ

অর্থঃ ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও (পশু) নাহর (কুরবানি) কর।’ [সূরা কাউছার, আয়াত: ২]

 – قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ 

অর্থঃ ‘বল, আমারছলাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোনো শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’

[সূরা আন‘আম, আয়াত: ১৬২, ১৬৩]

হাদিসে এসেছে:—

عن البراء بن عازب رضى الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من ذبح بعد الصلاة- فقد تم نسكه- وأصاب سنة المسلمين 

অর্থঃ বারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ঈদের সালাতের পর কুরবানির পশু যবেহ করল তার কুরবানি পরিপূর্ণ হল ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল।

[বুখারি: ৫৫৪৫, মুসলিম: ১৯১৬]

عن أنس بن مالك -رضي الله عنه- قال: ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين- ذبحهما بيده- وسمى وكبر- ووضع رجله على صفاحهما [رواه البخاري ومسلم] وفي لفظ البخاري أقرنين قبل أملحين.

অর্থঃ আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন।[বুখারি , মুসলিম] তবে বুখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে ‘শিং ওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে।